চন্দ্ৰকান্তপুরের বাক্স রহস্য

Share:

 চন্দ্ৰকান্তপুরের বাক্স রহস্য 

a woman in jungle with a box in hand
a woman in jungle with a box in hand

অনেক আগে চন্দ্রকান্তপুর নামক একটি ছোট গ্রাম ছিল। গ্রামের পাশেই বিশাল জঙ্গল, গ্রামের লোকেরা জঙ্গলে একা কখনোই যেত না কোনো দরকারে গেলে দল বেঁধে যেত, কারণ জঙ্গল টা ছিলো অনেক প্রাচীন এবং বড়ো, দিনের বেলাতেও জঙ্গলের ভেতরে অন্ধকার, একা যেতেই সাহস হয় না কারো।  

একদিন সবাই মিলে গেলো জঙ্গলে কাঠ কুড়াতে, চারিদিকে জিঝিপোকার ডাক সোনা যাচ্ছে, গ্রামের হরি ধোপার বৌ ও সবার সঙ্গে জঙ্গলে কাঠ কুড়াতে গেছে , সে কাঠ কুড়াতে কুড়াতে একটা গাছের শেকড়ে লুকিয়ে থাকা চকচকে জিনিস দেখতে পেলো, কৌতূহল বসে সেটা নাড়াচাড়া দিতে লাগলো ,বস্তু টা কি তা দেখার জন্যে, হটাৎ সেটা শেকড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো, সেটা ছিল একটা ছোট্ট চকচকে ধাতুর বাক্স, হরি ধোপার বৌ সেটা টুক করে নিজের কাপড়ে লুকিয়ে রেখে দিলো পাচ্ছে কেও দেখে ফেলে, 

হরি ধোপার বৌ ও সবাই কাঠ কুড়িয়ে বাড়ীতে চলে এলো, বাড়ীতে এসে বৌটা তার স্বামী হরি ধোপাকে বাক্সটা দেখালো, তার স্বামী বাক্সটা নিয়ে দেখলো বাক্সটার গায়ে অদ্ভুত সব নক্সা রয়েছে, তাঁরা ভাবলো ভেতরে নিশ্চই অনেক মূলবান কিছু আছে, যা পেলে তারা অনেক টাকার মালিক হয়ে যাবে, কিন্তু তাঁরা জানতো না যে এই বাক্সটাই তাদের এবং পুরো গ্রামের সর্বনাশ ডেকে আনবে। 

যাই হোক, গভীর রাতে চারিদিক যখন নিস্তব্ধ কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই তখন তাঁরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে  বাক্সটা খোলার চেষ্টা করলো কিন্তু খুলতে পারলো না , অবশেষে অনেক চেষ্টার পরে হটাৎ বাক্সটা খুলে গেলো। 

a dark jungle with small sunlight
a dark jungle with small sunlight
খুলতেই তার মধ্যে থেকে অনেক তীব্র নীল আলো চারিদিক আলোকিত করে দিল, হরি ধোপা ও তাঁর বৌ দুজনের চোখ ধাঁদিয়ে উঠলো, চোখে  ঠিক করে দেখতে পারছে না তাঁরা, সেই অবস্থায় বাক্সটার মধ্যে কি আছে সেটা দেখার জন্যে তাকাতেই, তাদের শরীর অঙ্গ প্রতঙ্গ আলোর দিকে সুতোর মতো সরু হয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে বাক্সে হারিয়ে গেলো!!

পরের দিন সকাল বেলায়, পাড়ার একজন লোক কাজে যাবার জন্যে হরি ধোপাকে ডাকতে আসলো, কিন্তু অনেক ডাকাডাকির পরেও কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে চলে গেল।সে ভাবলো, বুঝি কোনো জরুরি কাজে স্বামী ইস্ত্রি দুজনে অনেক সকালে বেরিয়ে গেছে। 

একদিন হয়ে গেলো তাদের কোনো দেখা নেই , গ্রামের লোক ভাবলো হয়তো তারা অন্য গ্রামে তাদের মেয়ের বাড়ীতে বেড়াতে গেছে। এর পর বেশ কয়েক দিন পার হয়ে গেছে , হটাৎ তার মেয়ে এসে হাজির, গ্রামের মানুষ হরি ধোপার মেয়ে কে দেখে তাঁর বাবা মায়ের কথা জানতে চাইলো, মেয়েটা জানালো কোই তার বাবা মা তো তার ওখানে যাই নি, সবাই হতবম্ভহ! তার মেয়েও চিন্তায় পড়লো কোথায় গেলো তার বাবা মা ??

গ্রামের সব লোক একজাগাই হলো এবং সবাই তারা  হরি ধোপার বাড়িতে জড়ো হলো , ঘরের দরজা খোলার চেষ্টা করলো কিন্তু দড়জা ভেতর থেকে বন্ধ দেখে সবার চিন্তা আরো বেড়ে গেলো , তারা ভাবলো হরি ধোপা ও তার বৌ কি ঘরের মধ্যে মরে পড়ে আছে না কি ?!এর পর তারা দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো সেখানে কেউ ছিল না , এটা কিভাবে সম্ভব বাড়ীতে কেউ নেই অথচ দড়জা ভেতর থেকে বন্ধ, বড়োই অদ্ভুত ব্যাপার!!

অনেক খোঁজা খুজির পর সকলে কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পেলোনা শুধু একটা চকচককে ছোট্ট অদ্ভুত বন্ধ বাক্স ছাড়া ,নানা লোকে নানান রকম কথা বলতে লাগলো ওই বাক্সটা সম্পর্কে , একজন বলে উঠলো বাক্সটা নিয়ে আমাদের গ্রামের যে মন্দিরের সামনে বট গাছের নিচে সাধু বাবা আছে তার কাছে নিয়ে চলো উনি কিছু বলতে পারবেন হয়তো !!?? সবাই তাতে সম্মতি জানালো , এবার সবাই চললো সাধু বাবার কাছে বাক্সটা নিয়ে। 

বাক্স টা সাধু বাবাকে দিয়ে, গ্রামের লোকেরা যা জানতো, সেটুকু সাধুবাবাকে বললো , সাধু বাবা বাক্সটাকে নেড়ে ছেড়ে দেখতে লাগলো , হটাৎ সাধুবাবার ভুরু কুঁচ্কে গেলো চোখ লাল হয়ে উঠলো, তার তন্ত্র সাধনার শক্তি দিয়ে বুজতে পারলো যে বাক্সটার ভেতরে কোনো অশুভ শক্তি আছে , আরো কিছু বোঝার আগেই বাক্সটা মৃদু কাঁপতে লাগলো এবং তাঁর ঢাকনা টা খুলে গেলো , আর  সঙ্গে সঙ্গে সেই তীব্র নীল আলোয় সাধুবাবা ও গ্রামের সব লোক সুতোর মতো পাকাতে পাকাতে নীল আলোর বাক্সর মধ্যে বিলীন হয়ে গেলো। 

তার পর বহু বছর পরে তখন শহর ও  গ্রামের মানুষ আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে, রাস্তায় আধুনিক গাড়ি ছুটে বেড়াচ্ছে হাতে মোবাইল ফোন  সকলের, কিন্তু সেই চন্দ্ৰকান্তপুর গ্রাম এখন আর নেই সেখানে রয়েছে এক গভীর জঙ্গল যা দিনের বেলাতেও অন্ধকার হয়ে থাকে ,

গ্রামের কোনো মালিক না থাকায় সরকার থেকে এখন জঙ্গল টাকে সংরক্ষিত করা হয়েছে যেখানে বহু জীবজন্তু যেমন পাখি, শেয়াল, বনবিড়াল, বেজি , সাপ  এইসব বাস করে। 

The End

কোন মন্তব্য নেই